ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বুধবার (২ অক্টোবর) ঘোষণা করেছে, তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান জোরদার করছে। এ অভিযানে নিয়মিত পদাতিক ও সাঁজোয়া ইউনিটগুলো অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৬তম ডিভিশনের গোলানি ব্রিগেড, ১৮৮তম সাঁজোয়া ব্রিগেড এবং ৬ষ্ঠ পদাতিক ব্রিগেড। এ অভিযানের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে। ইরানের মিসাইল হামলার জবাবে ইসরায়েল বড় ধরনের প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায়, ইসরায়েল এখন লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। ইরানের হামলার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যা তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। খবর রয়টার্সের।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তের টানেল এবং অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস করাই তাদের হামলার মূল লক্ষ্য। তবে বৈরুত বা দক্ষিণ লেবাননের প্রধান শহরগুলোতে বড় আকারের অভিযান পরিচালনার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
মঙ্গলবার ইরান বৃহত্তম সামরিক হামলা চালায় হয় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। তবে ইরান জানিয়েছে, তারা আর কোনো হামলা চালাবে না যদি না ইসরায়েল নতুন করে কোনো উসকানি দেয়। অন্যদিকে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েল ইরানের তেল উৎপাদন কেন্দ্রসহ কৌশলগত কিছু স্থাপনা টার্গেট করতে পারে।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত এক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছে।
বৈরুতের কিছু অংশ থেকে বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। ইসরায়েল নতুন করে ওই এলাকায় সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ জারি করেছে, যেখানে কয়েকদিনের টানা হামলার ফলে অধিকাংশ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। লেবাননের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় এক বছরের সীমান্ত যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ জন নিহত এবং ৯ হাজার জনের বেশি আহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে গত দুই সপ্তাহে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, বুধবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের আদাইসেহ শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করে পিছু হটতে বাধ্য করা হয়।
ইরানের মিসাইল হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইরানের মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক মিত্ররা— হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি বাহিনী এবং ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামাসের সমর্থনে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন হামলা চালিয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইরান ও হিজবুল্লাহকে অবিলম্বে ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন, ইরান পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। জাপানও এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, তাদের মঙ্গলবারের হামলা ছিল শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনাগুলোর উপর। এই হামলা হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহসহ অন্যান্য নেতাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল যদি আর কোনো উসকানি দেয়, তাহলে ইরানের প্রতিক্রিয়া আরো শক্তিশালী হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার জন্য ইরানকে ‘কঠোর মূল্য’ দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সাথে কথা বলে নিশ্চিত করেছেন, ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা যৌথভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইরানের এই হামলা একটি গুরুতর ও বিপজ্জনক উত্তেজনা। ইরানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার পর যদি সংঘর্ষ বাড়ে, তবে তারা ইসরায়েলের অবকাঠামোগুলোকে ‘ব্যাপক ধ্বংসের’ মুখে ঠেলে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি প্রতিরক্ষা জোট ইরানের মিসাইল হামলার বেশিরভাগ অংশ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ইরানের হামলায় ১৮০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়ল দেশটির জ্বালানি সরবরাহের ওপর সংঘাতের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
Leave a Reply